নরম সেক্যুলারিজমের মুখ-মুখোশ
নরম সেক্যুলারিজমের মুখ-মুখোশ
মুসলিম দেশগুলোতে সেক্যুলারিজমের নরম একটা ব্যাখ্যা বেশি সামনে আনা হয়। সেই ব্যাখ্যাটা হলো, সেকুলারিজম মানে ধর্মনিরপেক্ষতা। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় নীতি এমন থাকা যেন সব ধর্মের লোক যার যার ধর্ম স্বাভাবিকভাবে পালন করতে পারে। যেন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও নীতির মধ্যে কোনো ধর্মের শক্ত প্রভাব/প্রাধান্য না থাকে এবং কোনো ধর্মের বিরোধিতা না থাকে।
এই পর্যন্ত শুনলে ব্যাপারটাকে তেমন জটিল মনে হয় না। মনে হয়, সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে চলার ইসলামের যে নীতি তার সঙ্গে এর মিলই তো বেশি।
বাস্তবে এ ব্যাপারটায় যে অনেক ফাঁক আছে, সেটা তো বলাইবাহুল্য। কিন্তু এর সঙ্গে চোখে পড়ার মতো কয়েকটি এমন উপসর্গও রয়েছে, যেদিকে খেয়াল করলে অন্যভাবেও সেকুলারিজমের ভেতরের অবস্থাটা বের হয়ে আসে।
মুসলিম দেশের সেকুলার তাত্ত্বিক যারা, যাদেরকে নাস্তিক্যবাদীরা খুব কাছের মনে করে, তাদের কয়েকটা সহজাত প্রবণতা আপনি পাবেন, যেগুলো ঘোষিত ধর্মনিরপেক্ষতার আওয়াজের সঙ্গে খুব একটা মিলে না।
[১] জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত ইসলামের ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিধানগুলোও তাদের একদমই পছন্দ হয় না। এসব বিষয় সব সময় তাদের আক্রমণের শিকার হয়। খাদ্য, পোশাক, কথাবার্তা, নাম- শব্দ এটিকেট, আদব-কায়দার ইসলামি কোনো রূপটাকেই তারা পছন্দ করতে চায় না। ইসলামের যে কোনো সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে তারা দুই চোখের বিষ মনে করে।
(অথচ ইসলামের এই বিষয়গুলোর সঙ্গে অপর ধর্মের অনুসারীদের ছোট করা অথবা তাদের ওপর মুসলিমদের প্রাধান্য পাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।)
[২] ইসলামের কোনো উৎসব-অনুষ্ঠানকে তারা ইতিবাচক/উৎসাহব্যঞ্জক দৃষ্টিতে অথবা যথাযথ উৎসবের আমেজে দেখে না। রমজান মাসের ইফতার-তারাবি, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা এসবের চেয়েও অন্য কোনো ধর্ম অথবা ভূখন্ডগত অন্য কোনো উৎসবের উপলক্ষকে তারা বেশি পছন্দ করে, বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
(অথচ সব ধর্মের উৎসবের প্রতিই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সমান দৃষ্টি থাকার কথা ছিল।)
[৩] ইসলাম কিংবা মুসলিমদের সমাজবদ্ধ/সঙ্ঘবদ্ধ রূপ তারা মোটেও পছন্দ করে না। ইসলাম যেন নিরিবিলি একা একা চলে, এর কোনো সমাজ, দল, গোষ্ঠী বা বিস্তৃতি না থাকে এমন একটা মনোভঙ্গি তারা লালন করে। ধর্মীয়ভাবে মুসলিমদের সমাজবদ্ধতার কোনো আয়োজন ও রূপ দেখলে তারা খুবই রুষ্ট হয়ে উঠতে থাকে।
( অথচ অপরাপর ধর্মের সমাজবদ্ধতা এবং সংঘবদ্ধতার ভিত্তিতে ধর্মীয় জোশ ও মাতামাতির সব কিছুকেই তারা উৎসাহ দিয়ে থাকে।)
[৪] ইসলাম ও মুসলমানের যে কোনোরকম শক্তিমত্তাকে তারা অপরাধ মনে করে। মজলুম মুসলমান তাদের খুব পছন্দ। নিঃসঙ্গ দুর্বল ও মার খাওয়া অবস্থার মধ্যে থাকলে ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতি জানানো যেতে পারে, ইসলাম-মুসলিমের শক্তিমত্তা ও আত্মনির্ভরতা এরা দু'চোখে দেখতে পারে না।
(অথচ এরাই ইহুদি-খ্রিস্টান ও হিন্দুদের ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক/জাতীয়তাবাদী শক্তিমত্তার প্রশংসা করে।)
[৫] এরা ইসলামের প্রচার এবং কারো ইসলামে দীক্ষিত হওয়াকে খুবই অপছন্দ করে; অনেক ক্ষেত্রে বে-আইনিও মনে করে। অথচ অপর কোনো কোনো ধর্মের মিশনারি তৎপরতা চলতে দেওয়া এবং অবাধ ধর্মান্তরের কাজকে তারা বাহবা দেয়।
মোটা দাগের এই বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল করলে মুসলিম দেশে সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার আসল চেহারাটা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যায়।
তর্কের সময় কথিত নরমপন্থী অনেক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বলতে চেষ্টা করেন, তারা এজাতীয় ইসলাম-বিদ্বেষী বৈশিষ্ট্য নিজেদের মধ্যে লালন করেন না; কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারাও এ বৈশিষ্টগুলো থেকে নিজেদেরকে আলাদা রাখতে পারেন না।
সেকুলারিজমের 'সবচেয়ে নরম' অংশটার মধ্যে যত বিষ, আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, ইসলামের প্রতি মুসলমানদেরকে নিস্পৃহ করে তোলা এবং ধর্মীয় বন্ধনের দিক থেকে মুসলমানদেরকে পরস্পরের কাছ থেকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলার সব উপাদান তার মধ্যে বিদ্যমান।
@ কথাগুলো বলার সময় কেবল এ-দেশের প্রেক্ষাপট সামনে রাখা হয়নি এবং কোনো নির্দিষ্ট দল অথবা সময়কে টার্গেট করা হয়নি। বরং সব দেশ ও ভূখন্ড এবং ইতিহাস ও বর্তমানের বাস্তবতা সামনে রেখেই বলা হয়েছে। আপনি ভাবুন, দেখুন বাস্তবতার সঙ্গে বিষয়গুলো মিলে কি না।
২৭ জুলাই ২০২১
কপি মুহতারাম Sharif Muhammad
No comments