Header Ads

Header ADS

মুখোশের আড়ালে

 গল্পঃমুখোশের অন্তরালে 

পর্ব_১

লেখকঃ আরিয়ান আয়মান নীল

..........


নিজের স্ত্রীকে অন্য এক পুরুষের শয্যায় আবিষ্কার করার পর থেকে শফিক চৌধুরীর পুরো পৃথিবী এলোমেলো হয়ে গেলো। ২৭ বছরের এই জীবনে সে যতবার ধাক্কা খেয়েছে, ততোবার উঠে দাঁড়িয়েছে। তবু, কখনো সমাজের প্রচলিত ভালো মানুষ হওয়ার প্রচেষ্টা থেকে কখনো সরে আসেনি। কর্মক্ষেত্রে, ব্যক্তিগত জীবনে সব জায়গায় সে সৎ থেকেছে। কিন্তু, এই সৎ থাকাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। সততার পুরুষ্কার হিসেবে সে পেয়েছে অর্থকষ্টে ভোগা জীবন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিম্ন পদস্থ চাকরী, ব্যর্থ মানুষের তকমা, সর্বশেষ অসৎ স্ত্রী। চুপচাপ নিজের কক্ষে বসে থেকে ঘুমন্ত স্ত্রীর দিকে একমনে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে সিদ্ধান্ত নিলো, আর নয়। অনেক তো হলো ভালো মানুষগিরি। নষ্টরা সবকিছু পেয়ে যাবে আর ভালোরা সবকিছুতে ব্যর্থ হবে- এরকম হতে পারে না। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে সুখের আশায় এভাবে দিনের পর দিন পৃথিবীতে অসুখী থাকার কোনো অর্থ হয় না। সময় হয়েছে এবার বদলে যাবার। হারানো সবকিছুকে ফিরে পাবার। নতুন করে বেঁচে উঠার, জীবনটাকে নতুন করে দেখবার।


সিদ্ধান্ত নিয়ে সে উঠে চলে গেলো ঘরের বাহিরে। তারপর ধীর পায়ে কিছুক্ষণ রাস্তায় হেঁটে একটি রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো। রিক্সাওয়ালা বেশ কয়েকবার তাকে জিজ্ঞেস করলো, কোথায় যাবেন? 

রিক্সাওয়ালার প্রশ্ন শুনে সে বললো, আপনি চলতে থাকেন। যা ভাড়া লাগে আমি দিবো।

রিক্সাওয়ালা এই কথা শুনে একমনে রিক্সা চালাতে শুরু করলো। কিন্তু কতক্ষণ গন্তব্যহীনভাবে রিক্সা চালানো যায়? কোনো মানুষই তো গন্তব্যহীনভাবে বেশিক্ষণ চলতে পারে না। তাই সে আবার জিজ্ঞেস করলো। তখন শফিক চৌধুরী আবারো একই উত্তর দিলো। এভাবে ৩ বার একই উত্তর পাওয়ার পর রিক্সাওয়ালা বললো, এভাবে হবে না মামা। আমি আর যামু না। আপনে অন্য কোনো রিক্সায় যান। 

তার কথা শুনে শফিক চৌধুরী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। তারপর বললো, নষ্ট মেয়েছেলে আর মদ পাওয়া যায় কোথায় বলতে পারেন?

রিক্সাওয়ালা কথাটা শুনে অবাক হলো। সে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বললো, মামা আপনারে এরকম মানুষ মনে হয় না। আপনি যাবেন? সত্যি?

রিক্সাওয়ালার দিকে তাকিয়ে শফিক বললো, মানুষকে কী আর দেখে চেনা যায়? মানুষের বাহিরের অংশটা মুখোশ। সে সেই মুখোশটা ধারণ করে সুবিধামতো জীবনযাপন করে। কিন্তু, তার ভেতরে যে মানুষটা থাকে তাকে কী সবাই চিনে? সেই মানুষটাকে যদি চেনা যেতো তবে পৃথিবীতে আর কোনো ভীলো মানুষ থাকতো না। আর, এই ভালোমানুষগিরি করে কী হবে? সবখানেই মার খেতে হয়। তারচেয়ে বরং নষ্ট হয়ে যাওয়াই ভালো। তাতে অন্তত সবকিছু পাওয়া যায়।

রিক্সাওয়ালা শফিকের কথা শুনে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। তার এই দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পেরে শফিক বললো, আপনার যদি এমন কোনো পরিচিত জায়গা থাকে তবে আপনি আমাকে সেখানে নিয়ে যান। বিনিময়ে আমি আপনাকে ভালোই টাকা দিবো।

রিক্সাওয়ালা কিছুক্ষণ ভেবে বললো, আপনারে একজায়গায় নিয়ে যাচ্ছি, ওখান থেকে মদ কিনে আমার বাসায় চলেন।

শফিক অবাক হয়ে বললো, তোমার বাসায় কেনো?

রিক্সাওয়ালা বললেন, মামা আমার বাসায় নষ্ট মেয়ে আছে। ফিগারটা আহামরি ভালো না। তবে, আপনারে সে সুখী করতে পারবে।

শফিক তার কথা শুনে বললো, মেয়েটা কে?

রিক্সাওয়ালা বললো, মামা, আমার স্ত্রী।


রিক্সাওয়ালার কথা শুনে শফিক চুপ করে রইলো। তার মনে হলো কেউ যেনো তার মাথায় খুব জোরে আঘাত করেছে। কিছুক্ষণ এভাবে ঝিম মেরে বসে থাকার পর সে বললো, আচ্ছা চলেন।


চলতে চলতে সে রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলো, আপনার স্ত্রীকে আপনি এই পেশায় নামালেন কেনো?

রিক্সাওয়ালা বললো, মামা পেট চলে না। আর পেট যখন চলে না, তখন ভালো মন্দ কিছু মাথায় থাকে না। ভালো-মন্দ ওসব বড়লোকী ব্যাপার। পেটে ভাত জুটলে তখন ভালো মন্দ চইলা আসে। এমনকি ধর্মও চলে আসে। কিন্তু যখন পেটে কিছু পড়ে না তখন ধর্ম তো দূরের কথা ঈশ্বররেও খুঁইজ্জা পাওয়া যায় না। তখন বুঝি পেটই হইলো ঈশ্বর। 

রিক্সাওয়ালার কথা শুনে সে একদম চুপ হয়ে গেলো। তার মনে হলো ,রিক্সাওয়ালা কথাটা তো ঠিকই বলেছেন।


এরপর আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সে রিক্সাওয়ালার কথা মতো কাজ করলো। আর এভাবেই সে প্রথমবারের মতো মদ ও স্ত্রী ব্যতীত অন্য নারীর সঙ্গ পেলো।


সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে রহিমা আবিষ্কার করলো তার স্বামী ঘরে নেই। অবাক হয়ে সে চারপাশ খুঁজে দেখলো। কোথাও তার কোনো চিহ্ন নেই। শফিক চৌধুরীর এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাবার বিষয়টি তার অস্বাভাবিক লাগলেও সে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। নিজেকে সে আপনমনে বললো, ছুঁচো হারিয়ে গেছে তা নিয়ে এতো ভেবে কী হবে? তারচেয়ে বরং তোমার প্রিয়তমকে ডেকে নিয়ে আসো। তার সাথে এই সূযোগে ফূর্তি করে নাও। 

ভাবতে ভাবতে সে তার প্রেমিক আকিবকে ফোন করলো।

- হ্যালো?

- হ্যালো, ফ্রি আছো?

- তোমার জন্য ফ্রি না থেকে পারি বলো?

- বাসা খালি আছে। বোকাটা সকাল সকাল কই যেনো বেরিয়ে পড়েছে। সময় থাকলে চলে আসো। অনেকদিন তোমারে কাছে পাই না।

- আচ্ছা, আমি এখনই আসছি।


ফোন রেখে রহিমা চলে গেলো প্রাতঃকৃত সারতে। তারপর, বের হয়ে এসে বারান্দায় দাঁড়াতেই দেখলো আকিব আসছে। আকিবকে আসতে দেখে তার ভেতরে একটা ভালো লাগার অনুভূতি জেগে উঠলো। এভাবেই সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকিবের আসা দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর ঘরের কলিং বেল বেজে উঠলো। একরাশ ভালো লাগা নিয়ে সে দরজা খুলে দিলো। আকিব দরজা দিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে জড়িয়ে ধরলো রহিমাকে। তারপর দীর্ঘ ১ ঘন্টা সুখের অন্য এক ভুবনে ডুবে থাকলো তারা। এরমধ্যেই যে শফিক চৌধুরী ঘরে ফিরে এসেছে তারা কেউই তা টের পায়নি। কেননা, এতোদিন পর একটা পুরুষ শরীর, একটা নারী শরীরকে পেয়ে যে উন্মাদনায় ডুবে গিয়েছিলো তাতে পৃথিবীর আর সবকিছু তুচ্ছ বলে গণ্য হলো।


সুখের চরম মুহূর্ত পার করার পর রহিমা আকিবের বুকে তার মাথা চেপে ধরলো। চোখ বন্ধ করে আকিবের উষ্ণ আলিঙ্গন উপভোগ করতে করতে সে বললো, শফিকের প্রমোশনটা কি এবারও আটকে রাখা যায় না? 

আকিব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, আর ক'বছর বলো? একজন মানুষকে বিগত ৪ বছর ধরে একই জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে। এবারও যদি আটকে রাখা হয় তাহলে বাকীরা সবাই ক্ষেপে যাবে। 

রহিমা বললো, আমি জানি না, তুমি কীভাবে করবা। এবারও তার প্রমোশনটা আটকে দাও। সে প্রমোশন পেলে তার দাপট বেড়ে যাবে। আমি এতোদিনে খেয়াল করেছি প্রমোশন না পাওয়ার ব্যর্থতার কারণে সে বিড়ালের মতো মিউ মিউ করে থাকে। কিন্তু প্রমোশন পেলেই সে আস্তে আস্তে তার থাবা বের করবে। এই মানুষটা আদৌতে বিড়াল না। পরিস্থিতির কারণে সে বিড়াল হয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছে। জানি না, এভাবে কতদিন তাকে আটকে রাখতে পারবো। বাড়িতে তার অঢেল সম্পত্তি। ভালো মানুষী দেখিয়ে সে এসবের মালিকানা দাবি করেনি। সত্যি বলতে তাকে আমি দাবী করতে দিইনি। ইচ্ছে করেই তার চারপাশের সবকিছু দমিয়ে রেখেছি, যাতে সে কর্তৃত্ব করতে না পারে। আর মানুষটাও ব্যর্থতার ভারে এতোটাই নুঁয়ে পড়ে গেছে যে কী করবে তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। কিন্তু যখন একবার বুঝে যাবে তখন সে কী রূপ যে ধারণ করবে তা শুধু আমিই বলতে পারি। কারণ, আমি তার মাঝে লুকিয়ে থাকা বাঘটিকে দেখেছি। তবে আমার সৌভাগ্য তার ভেতরের সত্ত্বার কথা সে নিজেও এখনো জানতে পারেনি।


একনাগারে কথাগুলো বলে আকিবকে চুমু খেলো রহিমা। কিন্তু সে ঘুণাক্ষরেও জানতে পারলো না, দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে সবকথা শুনেছে শফিক। যাকে সে এতোবছর ধরে পেলে পুষে বড় করেছে, সে যে এরকম কালনাগিনী, সেই যে তার প্রধান শত্রু তা জেনে গেছে লোকটা। এতোদিন ধরে পুতুলের মতো সাজিয়ে যে খেলা চলাচ্ছিসল সে সেই খেলা যে এখন আর পুতুল খেলা রইলো না, রূপান্তরিত হলো যুদ্ধে; আর ইতিমধ্যেই যে হয়ে গেলো সেই যুদ্ধের সূচনা- তা জানা হলো না আকিবের বুকে নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা রহিমার...!


চলবে...!


-গল্পটা অনেক আগেই লিখসিলাম পথম পর্ব পোস্ট ও করেসিলাম বাট কোন এক অজানা কারনে আবার ডিলিট করে দিয়েসিলাম। আবার কন্টিনিউ করলাম। সবার যুক্তিসঙ্গত মতামতের আশাবাদী।🖤


No comments

Powered by Blogger.